অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অবিশ্বাস ও মান-অভিমানে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল একটি সংসার। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হস্তক্ষেপে আবার জোড়া লাগল সেই সংসার। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন সেই ওসি। সম্প্রতি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। ফারজানা আক্তার ফাহিমা (২৬) ও আলমগীর হোসেন (৩২)-এর বৈবাহিক সম্পর্কের পর ৩ বছর বয়সের একজন ছেলে সন্তানও রয়েছে তাদের। আর্থিক অসচ্ছলতা নয়, পারস্পারিক সন্দেহ, সংশয় এবং মান-অভিমানকে কেন্দ্র করে স্বামী প্রবাসী আলমগীরের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী ফারজাহানা আক্তার ফাহিমা নানা অভিযোগ তুলে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। সাথে সংযুক্ত করেছিলেন, তাকে নির্যাতন করায় একটি চিকিৎসাপত্র। যাতে উভয় পরিবারের ধারণা ছিল সংসারটি ভেঙে যাবে।
অভিযোগটি পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাদেকুর রহমান কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে অভিযোগে বর্ণিত বিষয়গুলোর তেমন কোন সত্যতা পাননি। তবে এ দম্পতির দুজনের মধ্যে পারস্পারিক অবিশ্বাস ও ভুল বুঝাবুঝির বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। অভিযোগকারী গৃহবধূর কোল জুড়ে ৩ বছরের ফুটফুটে শিশু আবদুল্লাহ ওয়াহিদকে দেখে ওসি সাদেকুর রহমানের মানবিক মনটি কেঁদে ওঠে। তিনি অভিযোগকারী ফাহিমা এবং তার স্বামী আবুধাবীপ্রবাসী আলমগীর হোসেনকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনের সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলার পর কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে অনুরোধ করেন, একটিবারের জন্য শিশু সন্তান আবদুল্লাহকে নিয়ে দুজনে অন্তত পক্ষে তিন দিন এক সাথে বসবাস করার জন্য। তিন দিন বসবাসের পর ওই দম্পতি তারাই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তারা বিচ্ছিন্ন হবে না। জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। পরে স্বামী-স্ত্রী দুজনে ওসি সাদেকুর রহমানের কাছে এসে তাদের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেন। এ প্রেক্ষিতে ওসি সাদেকুর রহমানের নির্দেশনায় কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই এম আশরাফুল ইসলামের সহযোগিতায় গৃহবধূ ফারজানা আক্তার ফাহিমা তার স্বামী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন। পরস্পরে আগামী জীবন সুন্দর ও সাবলীল করার লক্ষ্যে ওসি সাদেকুর রহমানের দোয়া চেয়ে বিদায় নেন।
ওসির এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপকে উভয় পরিবার সাধুবাদ জানায়। এ ঘটনা জানাজানি হবার পর উভয়ের পরিবার, এলাকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় এ ঘটনাটি ‘টক অব দ্যা কোম্পানীগঞ্জ’ পরিণত হয়।
ওই দম্পতি গৃহবধূ ফারজানা আক্তার ফাহিমা উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা ১নং ওয়ার্ড রামদী মতলব চৌকিদার বাড়ির আবু তাহেরের মেয়ে এবং আবুধাবীপ্রবাসী আলমগীর হোসেন উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ড ভান্ডারী বাড়ির আইয়ুব আলীর ছেলে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ওই দম্পতি আলমগীর হোসেন ও ফারজানা আক্তার ফাহিমা প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে জানান, একজন মানবিক ওসির সংস্পর্শে আমাদের ভেঙে যাওয়ার উপক্রম সংসারে জোড়া লেগেছে। আমরা নতুন একটি জীবন ফিরে পেয়েছি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, একটি মানবিক ভালো কাজ করতে পেরে খুব আনন্দবোধ করছি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। দোয়া করছি তারা যেন সুখী হয়।
Leave a Reply